সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল ৮টার কিছু পর রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
গ্রেপ্তারের পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ডিবি জানায়, খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটি হত্যা মামলা এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের অভিযোগে একটি মামলা রয়েছে।
🔍 বিতর্কিত অতীত ও অভিযোগের তালিকা:
২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন খায়রুল হক। ২০১১ সালের ১৭ মে ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় অবসর গ্রহণ করেন তিনি।
অবসরের কয়েক দিন আগে দেওয়া এক রায়ে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেন, যা দেশের রাজনীতিতে গভীর আলোড়ন তোলে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে ওঠে ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণ, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের জালিয়াতি, সরকারি সম্পদের অপব্যবহার ও পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ।
এসব অভিযোগে ২০২৪ সালের আগস্টে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের আদালতে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়।
⚖️ সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে:
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এক সংবাদ সম্মেলনে খায়রুল হকের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়ে তাকে “বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্র ধ্বংসের অন্যতম কারিগর” হিসেবে উল্লেখ করে।
প্রধান বিচারপতি থাকাকালে তার বেশ কিছু রায় ও সিদ্ধান্ত ছিল অত্যন্ত বিতর্কিত। অভিযোগ রয়েছে, তিনি জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের উপেক্ষা করে পদোন্নতি পেয়েছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায় দিয়েছেন, ট্রাস্টি তহবিলের অর্থ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত চিকিৎসা করিয়েছেন এবং শহীদ জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে অস্বীকার করেছেন।
এছাড়া, হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিনের এখতিয়ার কেড়ে নেওয়া, খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের রায়, সহ তার একাধিক রায় বিচারাঙ্গনে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।